সমস্ত লেখাগুলি

জ্বিন বা ভুতে ধরা আসলে কী? -
পার্থপ্রতিম পাল
Dec. 3, 2024 | সামাজিক ইস্যু | views:813 | likes:0 | share: 0 | comments:0

আমাদের মত দেশে জ্বীনের আছর বা ভুতে ধরা ঘটনা দেখেননি এমন লোক বিরল। সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষ হটাৎ অস্বাভাবিক কিছু কর্মকান্ড শুরু করে চারিদিকে হৈচৈ ফেলে দেয় তারপর ওঝা বা ফকিরের ভুত জ্বীন তাড়ানোর নাটকীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পর্বের সমাপ্তি হয়। 

কিন্তু এই জ্বিন বা ভুতের ভরের আসল কারন কী? 

কী বলছে চিকিৎসা বিজ্ঞান? কী কারনে জ্বিন ভুতে পাওয়া মানুষ এমন করে?

জ্বিন/ভুতে ধরা কেসের অধিকাংশ হিস্টেরিয়ায় আক্রান্ত। 

হিস্টেরিয়া ছাড়াও সিজোফ্রেনিয়া, স্কিটসোফ্রেনিয়া, ম্যানিয়াক ডিপ্রেসিভড বা পারকিনসিনিজম সহ আরো কিছু রোগে এই রকম আচরণ দেখা যাতে পারে। কিন্তু হিস্টেরিয়াই হল কমন কারন।

হিস্টেরিয়া কি?

হিস্টিরিয়া হচ্ছে ব্যক্তির মধ্যে দুর্দমনীয় ভয় ও অতিরিক্ত আবেগের প্রকাশ। এই অবস্থায় রোগীর অনিয়ন্ত্রিত এবং সহিংস আচরণ করে থাকে।

হিস্টেরিয়ার লক্ষণ -

১)শরীরের অংশ বা পুরো শরীরই অবশ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হওয়া।

২) কথা বলতে না পারা, ঢোক গিলতে না পারা, গলার কাছে কিছু একটা আটকে আছে বলে মনে হওয়া।

৩)কখনো চোখে না দেখা বা কানে শুনতে না পারা।

৪) খিঁচুনি। খিঁচুনি হয়ে তারা অজ্ঞান এর মত হয়ে যায়। যদিও সেটা প্রকৃত খিঁচুনি বা অজ্ঞান নয়। মৃগী রোগের প্রকৃত খিঁচুনির মতো এখানে জিব বা ঠোঁট কেটে যায় না।

৫)হাত-পায়ের অস্বাভাবিক নড়াচড়া, বারবার চোখের পলক পড়া, জোর করে চোখ বন্ধ করে রাখা, ঘাড় বাঁকা করে থাকা এবং বমি করা বা বারবার বমির চেষ্টা করা।

৬)সহিংস মনোভাব ও অস্থিতিশীল হৃৎস্পন্দন।

৭)কোনো কারণ ছাড়াই অট্টহাসি বা কান্না করা।

হিস্টেরিয়া কেন হয়?

যেকোন কারণে মানসিক ক্রিয়াশক্তি দুর্বল হয়ে গেলে সেই অবাঞ্ছিত অবদমিত কামনাগুলো সজ্ঞান চেতনায় উঠে আসতে চায়। 

শুরু হয় দ্বন্দ্ব, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে নানা শারীরিক লক্ষণে।

• সামাজিক বা পারিবারিক অবহেলার শিকার হওয়া

• স্ট্রেস

• যৌন নিপীড়ন

• অলসতা

• কাছের কারো থেকে থাকলে

• নার্ভাসনেস

• আবেগের ত্রুটিপূর্ণ চর্চা

• মেন্টাল স্ট্রেস

• ভয়

• দুশ্চিন্তা

এগুলোই মূলত কারন।

হিস্টেরিয়া মেয়েদের কেন বেশি হয়?

নারীর ক্ষেত্রে সামাজিক বিধিনিষেধ বেশি থাকে। বিধিনিষেধের কারনে নারী তার কামনা-বাসনাগুলোকে অবদমিত করে রাখে। 

অবদমিত সহজাত কামনার সঙ্গে সামাজিক আচারের সংঘাত ঘটে। সৃষ্টি হয় সহ্যাতীত উৎকণ্ঠা ও মানসিক চাপ।

সহজে কিভাবে বুঝবেন এটা হিস্টেরিয়া নাকি প্রকৃত খিঁচুনি?

যেহেতু হিস্টেরিয়ায় কেউ প্রকৃত অজ্ঞান বা সেন্স হারায় না তাই এদের কখনো দাত লেগে জিভ কেটে যায় না। বরং দাতের পাটি খুলতে গেলে আরো জোরে আটকে রাখার চেষ্টা করে। একটা টর্চ নিয়ে চোখে ফেললে চোখের পিউপিল ছোট হয়ে যাবে আলোর জন্য যেটা অজ্ঞান হলে ছোট হয় না। ব্যাথা দিলে এরা ব্যাথা পায়।

ওঝা ফকিরে কিভাবে ভাল করে এদের?

হিস্টেরিয়ার ভুক্তভোগীরা মূলত আদর ভালবাসার কাঙ্গাল এবং অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। 

নিজের অবদমিত ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর পর এদের ক্ষোভ প্রশমিত হয় এবং সেটা থেকে স্বাভাবিক হবার পরিচিত কোন পদ্ধতি খোঁজে এরা যেটা হল ওঝা ফকিরের ঝাড়ফুক।

হিস্টেরিয়াতে/ ভুতে/ জ্বিনে ধরলে কি করণীয়?

ফকির ওঝা দিয়ে অপচিকিৎসা না করিয়ে রোগীকে যথোপযুক্ত  চিকিৎসা করানো উচিৎ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এর মাধ্যমে। 

পারিবারিক মানসিক সাপোর্ট হল চিকিৎসার সবচেয়ে বড় পার্ট। প্রতিটা হিস্টেরিয়া রোগী যথোপযুক্ত চিকিৎসা এবং সহায়তা পেলে সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।

হিন্দু কোড বিল কাকে বলে? -
পার্থপ্রতিম পাল
Nov. 27, 2024 | যুক্তি | views:884 | likes:1 | share: 0 | comments:0

ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে যাদের আগ্রহ আছে, তারা নিশ্চয়ই ভারতের “হিন্দু কোড বিল” বিষয়ে পড়েছেন। ভারত স্বাধীন হবার পরে পণ্ডিত নেহেরুর কেবিনেট এই বিলের মাধ্যমে হিন্দুসমাজ সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেন। বিয়ে, তালাক, নারী অধিকার, পৈত্রিক সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের মতো সংবেদনশীল বিষয় ছিলো এই বিলে। বিগত সময় ধরে চলে আসা সনাতনী কুসংস্কার, ধর্মের নামে অনাচার ও অধিকারহরণ বন্ধ করাই ছিলো এই বিলের উদ্দেশ্য। যুগোপযোগী এবং বাস্তবিক সিদ্ধান্তই ছিল এই বিলের সারকথা।


বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা পাওয়া, ইতিহাস ও শাস্ত্রে সুপণ্ডিত ড. বি আর আম্বেদকার ওই কেবিনেটের আইনমন্ত্রী ছিলেন। তিনিই এই বিলের প্রণেতা এবং প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর সমর্থনেই তিনি বিলটি প্রস্তুত করে সংসদে উত্থাপন করেন।


যথারীতি মৌলবাদী হিন্দুরা এর বিরোধিতায় রাস্তায় নেমে আসে। তারা বিভিন্ন শ্লোক দিয়ে ব্যাখ্যা করেন, এটা হিন্দুধর্মের প্রতি সরাসরি আক্রমণ। তাই ধর্মরক্ষায় এই বিল বন্ধ করতে হবে। একজন হিন্দু হিসেবে, এই বিল বন্ধ করা ধর্মীয় দায়িত্ব। দীর্ঘদিন ধরে একে-অন্যকে-গালি-দেয়া হিন্দুবাদী সংগঠনগুলোও এই ইস্যুতে এক হয়ে যায়। তারা বলে, আমাদের ধর্ম ও সামাজিক আইন সৃষ্টিকর্তাপ্রদত্ত বেদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কোনো মানুষের এই বিষয়ে আইন করার অধিকার নেই।


ড. আম্বেদকার উত্তর দেন, হিন্দুধর্মের সাথে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা আছে ভিন্ন জনের ভিন্ন ব্যাখ্যা নিয়ে। বিভিন্ন হিন্দুবাদীরা তাদের সুবিধামতো শাস্ত্রের ব্যাখ্যা করে বিভিন্ন সামাজিক কুকর্মের বৈধতা দেয়। তাই একটি স্পষ্ট আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ না করলে, অনাচার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

এতে মৌলবাদীরা আরও ক্ষেপে গিয়ে তাঁকে এবং তাঁর সরকারকে নাস্তিক আখ্যা দেয়। সরকার সেকুলারাইটিস রোগে আক্রান্ত বলে প্রচার করা হয়। ধর্মান্ধদের এরকম উন্মত্ততা দেখে কংগ্রেসের দুর্বল মানসিকতার লোকজন ঘাবড়ে যায়। তারাও আম্বেদকার ও নেহেরুকে বিলটি পাশ না করে ফেরত নেবার জন্য অনুরোধ করতে থাকে।


আম্বেদকার তার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। পণ্ডিত নেহেরুও নৈতিকতার দায় থেকে সমর্থন উঠিয়ে নিতে পারছিলেন না। তাই তিনি ঘোষণা দেন, এই বিলটি ফেরত নিলে তিনি ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারাবেন। তাই কোনোভাবেই তিনি বিল ফেরত নিতে চান না, বরং পুনরায় পাশ করার চেষ্টা করতে চান।


যারা সরাসরি মৌলবাদী হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা পেতেন, কিন্তু মনে মনে মৌলবাদী, তারা এই বিলের একটু অন্যভাবে সমালোচনা করেন। তারা বলেন, শুধু এক ধর্মের জন্য আইন বানানো কতোটুকু উচিত? একাধিক বিয়ে করা যদি হিন্দুদের জন্য নাজায়েজ হয়, তবে মুসলমানদের জন্য জায়েজ কেন? যাদের ভোটে সরকার ক্ষমতায় এসেছে সেই সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের নিয়ন্ত্রণে আইন বানানো হলে, মুসলমান ও অন্য সংখ্যালঘুদের জন্য আইন বানানো হচ্ছে না কেন? সরকার কি মুসলিমদের ভয় পায়?


বিল পাশ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন নেহেরু। সরকারের সময়ও শেষ হয়ে আসছিল। এসময় আম্বেদকার নেহেরুকে আবেদন করেন যে তাঁর শরীর খারাপ হচ্ছে। তিনি বিল পাস হবার পরেই নিজেকে ডাক্তারের হাতে ছাড়তে চান, তার আগে না। নেহেরু আবার চেষ্টা করেন। আরও ভয়াবহ বিরোধিতা আসে।


বছরখানেকের মধ্যেই ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবার জন্য সময় দরকার ছিলো। তাই সব দিক বিবেচনা করে, পণ্ডিত নেহেরু বিল ফেরত নেবার সিদ্ধান্ত নেন। তবে ঘোষণা দেন, কংগ্রেস যদি পুনরায় ক্ষমতায় আসে, তখন এই বিল পুনরায় উত্থাপন হবে। ওই সেশনে বিল পাশ না হওয়ায় ড. আম্বেদকার অভিমানে ইস্তফা দেন এবং চিরদিনের জন্য কংগ্রেস ত্যাগ করেন।


ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল সেই হিন্দু কোড বিল। এটাই মনে হচ্ছিলো জেতা-হারার ফ্যাক্টর। এটা ছিলো অনেকটা হিন্দু মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে নেহেরু আর কংগ্রেসের নৈতিক যুদ্ধ। হিন্দুবাদীরা শুধু আইনের বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা নেহেরুর বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রার্থী দেয় এবং নির্বাচিত হলে এই বিল চিরকালের জন্য আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করার প্রতিশ্রুতি দেন। এলাহাবাদের ফুলপুর আসনে নেহেরুর বিরুদ্ধে দাঁড়ান সে সময়ের বিখ্যাত ধর্মনেতা প্রভুদেব ব্রহ্মচারী।


হিন্দুবাদী নেতার জনপ্রিয়তা এবং প্রতিটি বক্তৃতায় নেহেরুর হিন্দু কোড বিলের পক্ষে বক্তৃতা শুনে মনে হচ্ছিল, নেহেরুর হার অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু হিন্দুবাদীদের লম্ফঝম্প বেশি হলেও শেষ পর্যন্ত ভোটে জয়লাভ করেন নেহেরু। তাঁর দল কংগ্রেস নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংসদে ফিরে আসে। ফিরে এসেই তিনি পুনরায় সেই বিল তোলেন। ১৯৫৬ সালের মধ্যে ৪টি আইনে ভাগ হয়ে বিলটি পাশ হয়।


অনেক বছর পার হয়ে গেছে। আজ সেসব ইতিহাস। ভারত ড. আম্বেদকারকে ভারতরত্ন ঘোষণা দিয়েছে, সংবিধান নির্মাতার সম্মান দিয়েছে, দলিতের ও নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রবাদপুরুষ আখ্যা দিয়েছে। এমনকি আজকের বিজেপিও তাঁর সংস্কারকে সম্মান দেখায়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই ড. আম্বেদকারকে মরতে হয়েছিলো নাস্তিক, দেশবিরোধী, ছুপা মুসলিমসহ আরও বহু গালিময় আখ্যা নিয়ে।

সমসাময়িক ইতিহাস নিয়ে রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নেয়া দরকার। তবে সবচেয়ে বেশি শিক্ষা নেয়া দরকার আমাদের সাধারণ জনগণের। মনে রাখতে হবে, ধর্ম, জাতীয়তাবাদ বা অন্য যেকোনো নামে উন্মাদনা যতো বেশিই হোক, শেষ পর্যন্ত সত্যেরই জয় হয়। উন্মাদনা দেখে ভুল পথে হাঁটলে হয়তো সাময়িক জয় বলে মনে হতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পরাজয় হয়েই দেখা দেয়।

বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞানমনস্কতা -
পার্থপ্রতিম পাল
Nov. 21, 2024 | বিজ্ঞানমনস্কতা | views:50 | likes:0 | share: 0 | comments:0

বর্তমান যুগকে বলা হয় বিজ্ঞানের যুগ। বর্তমান সময়ের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে লেগে আছে বিজ্ঞানের পরশ। বিজ্ঞানের ছোঁয়াতে এখন মানুষ পরিহার করেছে নানা রকম কুসংস্কার, গ্রহন করেছে নানা রকম টেকনোলোজি ও তত্ত্ব। তার পরেও মনে প্রশ্ন জাগে এই বিজ্ঞানের যুগেও মানুষ কি বিজ্ঞানমনস্ক হচ্ছে নাকি শুধুই বিজ্ঞানের দানগুলো নিচ্ছে? নাকি শুধুই শিখছে বিজ্ঞান আবিষ্কৃত তত্ত্ব ও টেকনোলোজির ব্যবহার। ‘বিজ্ঞান শিক্ষা’ ও ‘বিজ্ঞান-মনষ্কতা’ শব্দ দুটো স্বাভাবিক ভাবে একই মনে হলেও এদের ভেতর বিস্তর ফারাক বিদ্যমান। এ দুয়ের পার্থক্য জানার আগে জানা উচিত বিজ্ঞান কি? সহজ ভাষায় বিজ্ঞান অর্থ বিশেষ জ্ঞান, যে কোন জ্ঞানের পদ্ধতিগত বিশ্লেষণকে বিজ্ঞান বলা হয়। উইকিপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, “বিজ্ঞান হচ্ছে বিশ্বের যাবতীয় ভৌত বিষয়াবলী পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ, যাচাই, নিয়মসিদ্ধ, বিধিবদ্ধ ও গবেষণালদ্ধ পদ্ধতি যা জ্ঞানকে তৈরিপূর্বক সুসংগঠিত করার কেন্দ্রস্থল। ল্যাটিন শব্দ সায়েন্টিয়া থেকে ইংরেজি সায়েন্স শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শব্দটির অর্থ ‘বিশেষ জ্ঞান’। আবার বিজ্ঞানের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এর সাথে দর্শনেরও যোগসূত্র পাওয়া যায়। এদিক থেকে “বিজ্ঞান হচ্ছে একটা দর্শন, যে দর্শনের মূল ভিত্তিটাই হচ্ছে প্রশ্ন করা, কার্যকারন অনুসন্ধান করা।” 


বর্তমানে কর্পোরেট সমাজে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত কর্পোরেশনকেন্দ্রিক। এখানে আছে কর্পোরেশনের প্রয়োজন অনুসারে সিলেবাস। এর মাধ্যমে তাদের গোলামির জন্য যা যা লাগবে তা শেখানো এবং দক্ষ গোলামে পরিণত করা। বলা যায় “শিক্ষাব্যবস্থা এখন Two M সিনড্রোমে ভুগছে- marks and money। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য এখানে ভালো রেজাল্ট করে বের হয়ে কোনো কর্পোরেশনে চাকুরী করা এবং টাকা উপার্জন করা। আর এ’জন্য বিজ্ঞান শিক্ষাকেই সবাই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করলে করে খাওয়ার অভাব হবে না তার কারন বুঝি এই। এভাবে সেই সব শিক্ষার্থী বিজ্ঞান সিদ্ধ হয় (এই হচ্ছে কর্পোরেশনের লক্ষ্য সত্যি, কিন্তু তাদের বিজ্ঞানমনস্কতার উৎকর্ষ সাধিত হয় কি? কারন “বিজ্ঞান-মনস্কতা মানে নিছক বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সচেতনতা নয়, প্রযুক্তির ব্যবহারে দক্ষতা বা সপ্রতিভতা নয়। বিজ্ঞান-মনস্কতা মানে হল বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তি, যুক্তিশীল মননচর্চা, বৈচারিক চিন্তাকৌশল।” প্রশ্ন করে জানার স্পৃহা হচ্ছে বিজ্ঞান-মনষ্কতা৷ কোনো বিষয়ের এক কথায় সহমত প্রকাশ না করে বরং সংশয় প্রকাশ করা এবং যৌক্তিক ভাবে তার বিশ্লেষণ করা। মুলত “বিজ্ঞানমনস্কতা বলতে সেই দুটি বৈশিষ্ট্যকে বুঝায় যা বিজ্ঞানকে ধারণ করতে অপরিহার্য। এই দুটি বৈশিষ্ট্য হলো – প্রশ্ন করার প্রবণতা এবং কার্যকরণ অনুসন্ধানের প্রবণতা। সুতরাং, যে ব্যক্তি অন্তরে উপরোক্ত দুটি বৈশিষ্ট্য ধারণ করবেন তিনিই বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে বিবেচিত হবেন। আর এমন বিজ্ঞানমনষ্ক হতে হলে বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু প্রশ্ন করে, যৌক্তিক ভাবে বিশ্লেষণ করে জানার স্পৃহা। যেমন, “আহমদ শরীফ বা হুমায়ুন আজাদ, কেউই বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন না। দর্শন ও সাহিত্যের ছাত্র হয়েও তাঁরা বিজ্ঞানমনস্কতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তেমনি স্বশিক্ষিত বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন আরজ আলী মাতুব্বর। তিনিও স্বেচ্ছায় প্রশ্ন ও কার্যকরণ অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিজ্ঞানমনস্কতার প্রমাণ রেখেছেন। একই কথা প্রযোজ্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বেলায়ও। তিনিও বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক। কিন্তু, তিনি গ্রামে গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন শিশুদের। শিখিয়েছেন আহ্নিক গতি বার্ষিক গতির কার্যকরণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও একজন বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ ছিলেন।


কবি রবীন্দ্রনাথ আইনস্টাইনকে তাঁর যুক্তি-তর্ক দিয়ে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সত্য সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন যা কবির আধুনিক যুক্তিবাদী মন ও বিজ্ঞানমস্কতাকে প্রকাশ করে। আইনস্টাইন বিশ্বাস করতেন না যে মানুষের পর্যবেক্ষণের ওপরই নির্ভর করে আছে মহাবিশ্বের বাস্তব সত্য।বোরের কোয়াণ্টাম থিয়োরিতে কোপেনহেগের ব্যাখ্যার সাথে এখানেই ছিল তাঁর বিরোধ। সেই আলোকেই তাদের আলাপচারিতা হয়েছিল, হয়েছিল যুক্তি তর্ক। সমাজ নানা রকম অন্ধ ধ্যান ধারণাতে পূর্ণ। কিছুদিন আগেও বিশ্বাস করা হতো ডাইরিয়া, কলেরা, কুষ্ঠ রোগ গুলো নানা রকম খারাপ জ্বীনের আছড়। এমনকি এখনও মানুষ বিশ্বাস করে ঈশ্বর, আল্লাহ, গড, জ্বীন, ভুত, বিভিন্ন অশরীরী আত্মা। এবং এদের থেকে বাঁচার জন্য গ্রহণ করে তাবিজ, কবচ, পানিপড়া। এখনও অনেক মানুষ বাচ্চা না হওয়া জন্য স্মরাণাপন্ন হয় বিভিন্ন কবিরাজ বা তান্ত্রিকের। শুধু অশিক্ষিত শ্রেণীর মানুষ না; শিক্ষিত, উচ্চশিক্ষিত ও বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষও। যেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে বাচ্চা হওয়ার সাথে ক্রোমোজম, ডিম্বাণু, শুক্রানুর সম্পর্ক। অনেক সময় শোনা যায় অনেক ডাক্তারও নাকে কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে রুগীকে পরামর্শ দেন কবিরাজের কাছে যেতে। অর্থাৎ তারা বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছেন ঠিকই কিন্তু বিজ্ঞানমনস্ক হচ্ছেন না। বিজ্ঞানের তত্ত্ব, থিয়োরি জানছেন কিন্তু অন্তরে তা ধারণ করতে পারছেন না। সামাজিক, রাষ্ট্রীয়,ধর্মিয় নানাবিধ কারন তাদের বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। এখানে বিজ্ঞান শিক্ষাটাকে হেয় করছি না বরং বলতে চাচ্ছি বিজ্ঞান শিক্ষার সাথে চাই বিজ্ঞান মানসিকতা। প্রতি বছর অসংখ্য শিক্ষার্থী বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। অনেকে বিজ্ঞান সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান আহরণ করেছে কিন্তু উদ্ভাবনী মানসিকতা নেই, আঁকড়ে ধরে আছে সমাজের নানা রকম প্রচলিত বা প্রাচীন ধ্যান-ধারণা, ধর্মীয় বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে বিশ্বাস করছে নানা রকম কুসংস্কার। এরূপ শিক্ষা ব্যক্তিকে শুধু দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলবে। টাকার চাহিদা এখানে মুখ্য। এইরকম মানসিকতা থেকে বিজ্ঞানকে শুধু চর্চা করাই হয়, নিজেকে শুধু কর্পোরেট জগতের জন্য প্রস্তুত করাই হয় কিন্তু, প্রকৃত বিজ্ঞান শিক্ষার ফলে মস্তিষ্কে যে যুক্তিবোধ ও বিজ্ঞানমনস্কতার অনুরণন ঘটার কথা, তা আর ঘটার সুযোগ পায় না। কুসংস্কার, অপশিক্ষা আর রাষ্ট্রীয় দৈন্যের ফলে অঙ্কুরেই নষ্ট হয়ে যায় এইদেশের বেশীরভাগ শিক্ষার্থীর বিজ্ঞানমনস্কতা; বিজ্ঞান আটকে যায় সীমিত পরিসরের মধ্যে। আবার বিজ্ঞানমনস্কতা শুধু বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্যই প্রয়োজন না বরং ইতিহাস, ভূগোল সহ সকল বিষয় এমনকি জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে প্রয়োজন। সকলেরই জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রতিটা বিষয় বিশ্লেষণ করা উচিৎ, প্রশ্ন করা এবং সন্তোষজনক উত্তর খুঁজে বের করা উচিৎ। 


মোট কথা বিজ্ঞানমনস্কতা চাই সবার জন্য। আমাদের বিজ্ঞানমনষ্কতার পেছনে অন্যতম বাধা হয়ে আছে কর্পোরেট সমাজ, রাষ্ট ও ধর্ম। কর্পোরেট সমাজ চায় তার জন্য দক্ষ কর্মী। সে জন্য নিজের প্রয়োজন মতে বেঁধে দিয়েছে সিলেবাস। কর্পোরেশনের জন্য যতটুকু দক্ষতা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করে দিয়েছে সিলেবাসের মাধ্যমে। যার ভালো দক্ষতা থাকবে, কর্পোরেশনের কাছে তার গুরুত্ব তত বেশী হবে। আর এজন্য মাইনেও পাবে বেশি। তাই কর্পোরেশনে চাকুরী করার জন্যই বর্তমানে শিক্ষা। বিজ্ঞান শিক্ষা থেকে সকল প্রকার শিক্ষাই এমন। এভাবেই বিজ্ঞানমনস্ক হতে বাধা সৃষ্টি করছে কর্পোরেশন। রাষ্ট্রের স্বভাবই খবরদারি করা, বল প্রয়োগ করা। আর বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি মাত্রই স্বাধীন চিন্তার অধিকারী। তাই রাষ্ট্র এবং বিজ্ঞানমনস্কতা পুরোপুরি সাংঘর্ষিক একটা ব্যাপার। পৃথিবীর তাবৎ ধর্ম নানা রকম ধ্যান, ধারণা, কুসংস্কারচ্ছন্নতা। বহুযুগ পুর্বের সৃষ্ট এ ধর্মগুলো শুধুই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে টিকে আছে। আর এ বিশ্বাস ছোটবেলা থেকে একটা মানুষের ভেতরে অবস্থান করতে করতে এমন একটা শক্ত অবস্থানের সৃষ্টি করে যা ভাঙ্গা যায় না। ফলে বিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে শেখা তত্ত্ব গুলো এখানে খাটে না। যদিও তা প্রমাণিত। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে চাই সমাজের সুষ্ঠ পরিবেশ। চাই চিন্তার স্বাধীনতা, প্রশ্ন করার স্বাধীনতা, বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা। চাই ভাবনার সময়। চাই বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত প্রকাশের জন্য নির্ভীক পরিবেশ। সেই প্রকাশিত সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নতুন তত্ত্ব উপস্থাপনের ব্যবস্থা। যৌক্তিকতার মাধ্যমে গ্রহণ করার মানসিকতা। এসবই তো বিজ্ঞানমনস্কতা।

হিন্দু কোড বিল কাকে বলে? -
পার্থপ্রতিম পাল
Nov. 19, 2024 | আইন | views:449 | likes:0 | share: 0 | comments:0

ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে যাদের আগ্রহ আছে, তারা নিশ্চয়ই ভারতের “হিন্দু কোড বিল” বিষয়ে পড়েছেন। ভারত স্বাধীন হবার পরে পণ্ডিত নেহেরুর কেবিনেট এই বিলের মাধ্যমে হিন্দুসমাজ সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেন। বিয়ে, তালাক, নারী অধিকার, পৈত্রিক সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের মতো সংবেদনশীল বিষয় ছিলো এই বিলে। বিগত সময় ধরে চলে আসা সনাতনী কুসংস্কার, ধর্মের নামে অনাচার ও অধিকারহরণ বন্ধ করাই ছিলো এই বিলের উদ্দেশ্য। যুগোপযোগী এবং বাস্তবিক সিদ্ধান্তই ছিল এই বিলের সারকথা।

বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা পাওয়া, ইতিহাস ও শাস্ত্রে সুপণ্ডিত ড. বি আর আম্বেদকার ওই কেবিনেটের আইনমন্ত্রী ছিলেন। তিনিই এই বিলের প্রণেতা এবং প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর সমর্থনেই তিনি বিলটি প্রস্তুত করে সংসদে উত্থাপন করেন।

যথারীতি মৌলবাদী হিন্দুরা এর বিরোধিতায় রাস্তায় নেমে আসে। তারা বিভিন্ন শ্লোক দিয়ে ব্যাখ্যা করেন, এটা হিন্দুধর্মের প্রতি সরাসরি আক্রমণ। তাই ধর্মরক্ষায় এই বিল বন্ধ করতে হবে। একজন হিন্দু হিসেবে, এই বিল বন্ধ করা ধর্মীয় দায়িত্ব। দীর্ঘদিন ধরে একে-অন্যকে-গালি-দেয়া হিন্দুবাদী সংগঠনগুলোও এই ইস্যুতে এক হয়ে যায়। তারা বলে, আমাদের ধর্ম ও সামাজিক আইন সৃষ্টিকর্তাপ্রদত্ত বেদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কোনো মানুষের এই বিষয়ে আইন করার অধিকার নেই।

ড. আম্বেদকার উত্তর দেন, হিন্দুধর্মের সাথে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা আছে ভিন্ন জনের ভিন্ন ব্যাখ্যা নিয়ে। বিভিন্ন হিন্দুবাদীরা তাদের সুবিধামতো শাস্ত্রের ব্যাখ্যা করে বিভিন্ন সামাজিক কুকর্মের বৈধতা দেয়। তাই একটি স্পষ্ট আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ না করলে, অনাচার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

এতে মৌলবাদীরা আরও ক্ষেপে গিয়ে তাঁকে এবং তাঁর সরকারকে নাস্তিক আখ্যা দেয়। সরকার সেকুলারাইটিস রোগে আক্রান্ত বলে প্রচার করা হয়। ধর্মান্ধদের এরকম উন্মত্ততা দেখে কংগ্রেসের দুর্বল মানসিকতার লোকজন ঘাবড়ে যায়। তারাও আম্বেদকার ও নেহেরুকে বিলটি পাশ না করে ফেরত নেবার জন্য অনুরোধ করতে থাকে।

আম্বেদকার তার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। পণ্ডিত নেহেরুও নৈতিকতার দায় থেকে সমর্থন উঠিয়ে নিতে পারছিলেন না। তাই তিনি ঘোষণা দেন, এই বিলটি ফেরত নিলে তিনি ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারাবেন। তাই কোনোভাবেই তিনি বিল ফেরত নিতে চান না, বরং পুনরায় পাশ করার চেষ্টা করতে চান।

যারা সরাসরি মৌলবাদী হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা পেতেন, কিন্তু মনে মনে মৌলবাদী, তারা এই বিলের একটু অন্যভাবে সমালোচনা করেন। তারা বলেন, শুধু এক ধর্মের জন্য আইন বানানো কতোটুকু উচিত? একাধিক বিয়ে করা যদি হিন্দুদের জন্য নাজায়েজ হয়, তবে মুসলমানদের জন্য জায়েজ কেন? যাদের ভোটে সরকার ক্ষমতায় এসেছে সেই সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের নিয়ন্ত্রণে আইন বানানো হলে, মুসলমান ও অন্য সংখ্যালঘুদের জন্য আইন বানানো হচ্ছে না কেন? সরকার কি মুসলিমদের ভয় পায়?

বিল পাশ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন নেহেরু। সরকারের সময়ও শেষ হয়ে আসছিলো। এসময় আম্বেদকার নেহেরুকে আবেদন করেন যে তাঁর শরীর খারাপ হচ্ছে। তিনি বিল পাস হবার পরেই নিজেকে ডাক্তারের হাতে ছাড়তে চান, তার আগে না। নেহেরু আবার চেষ্টা করেন। আরও ভয়াবহ বিরোধিতা আসে।

বছরখানেকের মধ্যেই ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবার জন্য সময় দরকার ছিলো। তাই সব দিক বিবেচনা করে, পণ্ডিত নেহেরু বিল ফেরত নেবার সিদ্ধান্ত নেন। তবে ঘোষণা দেন, কংগ্রেস যদি পুনরায় ক্ষমতায় আসে, তখন এই বিল পুনরায় উত্থাপন হবে। ওই সেশনে বিল পাশ না হওয়ায় ড. আম্বেদকার অভিমানে ইস্তফা দেন এবং চিরদিনের জন্য কংগ্রেস ত্যাগ করেন।

ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিলো সেই হিন্দু কোড বিল। এটাই মনে হচ্ছিলো জেতা-হারার ফ্যাক্টর। এটা ছিলো অনেকটা হিন্দু মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে নেহেরু আর কংগ্রেসের নৈতিক যুদ্ধ। হিন্দুবাদীরা শুধু আইনের বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা নেহেরুর বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রার্থী দেয় এবং নির্বাচিত হলে এই বিল চিরকালের জন্য আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করার প্রতিশ্রুতি দেন। এলাহাবাদের ফুলপুর আসনে নেহেরুর বিরুদ্ধে দাঁড়ান সে সময়ের বিখ্যাত ধর্মনেতা প্রভুদেব ব্রহ্মচারী।

হিন্দুবাদী নেতার জনপ্রিয়তা এবং প্রতিটি বক্তৃতায় নেহেরুর হিন্দু কোড বিলের পক্ষে বক্তৃতা শুনে মনে হচ্ছিল, নেহেরুর হার অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু হিন্দুবাদীদের লম্ফঝম্প বেশি হলেও শেষ পর্যন্ত ভোটে জয়লাভ করেন নেহেরু। তাঁর দল কংগ্রেস নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংসদে ফিরে আসে। ফিরে এসেই তিনি পুনরায় সেই বিল তোলেন। ১৯৫৬ সালের মধ্যে ৪টি আইনে ভাগ হয়ে বিলটি পাশ হয়।

অনেক বছর পার হয়ে গেছে। আজ সেসব ইতিহাস। ভারত ড. আম্বেদকারকে ভারতরত্ন ঘোষণা দিয়েছে, সংবিধান নির্মাতার সম্মান দিয়েছে, দলিতের ও নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রবাদপুরুষ আখ্যা দিয়েছে। এমনকি আজকের বিজেপিও তাঁর সংস্কারকে সম্মান দেখায়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই ড. আম্বেদকারকে মরতে হয়েছিলো নাস্তিক, দেশবিরোধী, ছুপা মুসলিমসহ আরও বহু গালিময় আখ্যা নিয়ে।

সমসাময়িক ইতিহাস নিয়ে রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নেয়া দরকার। তবে সবচেয়ে বেশি শিক্ষা নেয়া দরকার আমাদের সাধারণ জনগণের। মনে রাখতে হবে, ধর্ম, জাতীয়তাবাদ বা অন্য যেকোনো নামে উন্মাদনা যতো বেশিই হোক, শেষ পর্যন্ত সত্যেরই জয় হয়। উন্মাদনা দেখে ভুল পথে হাঁটলে হয়তো সাময়িক জয় বলে মনে হতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পরাজয় হয়েই দেখা দেয়।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929